কেবল শিক্ষিত নয়, সন্তানকে দায়িত্বশীল হিসেবে গড়তে হবে

আহমেদ আল আমীন: আবু মহসিন খানের আত্মহত্যার ঘটনা আমাদের সমাজের চােখে আঙ্গুল দিয়ে কঠিন বার্তা দিয়ে গেছে। তিনি আত্মহত্যার
অব্যবহিত পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কথা বলে গেছেন। জীবনে কতোটা দুঃখী হলে একজন মানুষ ধীর-স্থির থেকে, প্রস্তুতি নিয়ে, পরিকল্পিতভাবে নিজেকে শেষ করতে আত্মহত্যা করে ফেলেন, এই ঘটনায় আমরা তা বুঝে গেছি। বিশেষ করে ফ্যামিলি বন্ডিংস, স্বার্থপরতা, দায়িত্বহীনতা ও একাকীত্বের বিষয়টি সচেতন মহলকে ভাবিয়েছে। 

 

মানুষ একা থাকতে পারে না। একা জন্ম নিতে, এমনকি মরতেও পারে না। বিদায়বেলার আয়োজনেও মানুষকে তার প্রয়োজন। এর ব্যত্যয় ঘটলেই বিপত্তি।

 

তেমনই ঘটেছে মহসিন খানের ক্ষেত্রে। ঢাকার ধানমন্ডির একটি ফ্লাটে গত দুইটা বছর তিনি একা থাকতে বাধ্য হয়েছেন। বিশাল বাড়িতে একা। একাকীত্ব তার উপর ভর করেছে, মনে বাসা বেঁধেছে বিসন্নতা। একাকীত্ব তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে।
একাকীত্ব ও বিসন্নতা থেকে সৃষ্টি হয়েছে একরাশ অভিমান। মহসিন খানের আত্মহত্যার ঘটনায় আলোচনা ও বিতর্কের দুয়ার খোলা রেখে নিম্নোক্ত পর্যবেক্ষণ ও বার্তা রয়েছে।

 

* সম্পর্কের সঙ্গে সময় ও স্বার্থের সংযোগ রয়েছে। প্রতিটি সম্পর্কের মাঝে ব্যবধান ও মাত্রা রয়েছে। পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বেশি আপন ব্যক্তি নিজে। পরিচর্যা না থাকলে সম্পর্কের গাছ মরে যায়।
* বাবা-মা সন্তানের জন্য সহজেই স্বার্থ ত্যাগ করতে পারে, সন্তান তা পারে না।
* একাকীত্ব মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
* সন্তান শুধু শিক্ষিত করলেই হবে না, তাকে দায়িত্বশীল ও সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শেকড় মাটির গভীরে না গেলে, সে গাছ ভূমিকে রক্ষা করতে পারে না। ফুলদানির মতো উপড়ে পাড়ে। ক্যারিয়ার গঠনের চেয়েও পরিবার গঠন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
* একজন মানুষ সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে; কিন্তু নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারে না।
* শুধু অপরের জন্যই নয়, নিজের জন্যও মানুষের কিছু করতে হবে। নিজেকে সময় দিতে হবে, মূল্যায়ন করতে হবে। নিজের ভেতরে সবসময় বারুদ সঞ্চয় করে রাখতে হবে। যে কোনো ধরনের আঁধার, স্বার্থপরতা ও আঘাতের হিমশৈলকে জ্বালিয়ে গলিয়ে দিয়ে এই বারুদ অসময়ে তাকে রক্ষা করবে।
* যে কোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করতে হবে, প্রতিকূলতা জীবনেরই অংশ। হত্যা বা আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। আপনার আত্মহত্যায় কার লাভ? যাদের কারণে আত্মহত্যা করছেন, তাদেরই নয় কি? আপনার আত্মহত্যা রণে ভঙ্গ দিয়ে পরাজয়ের বার্তা দেয় কি না?

সূএ:বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম করলে কঠোর ব্যবস্থা: পরিবেশ উপদেষ্টা

» চিন্ময় দাসকে গ্রেফতারের বিষয়ে যা জানালেন উপদেষ্টা আসিফ

» ‘শ্রম অধিকার চর্চার দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা জরুরি’

» জুলাই বিপ্লব ইতিহাসের ইতিবাচক পরিবর্তন : শফিকুর রহমান

» মিরপুর থানার ৩ নং বিট পুলিশ নিয়ে আলোচনা সভা

» রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম

» শালিস করা নিয়ে ইউপি সদস্যেল ওপর হামলার চেষ্টার অভিযোগ অস্ত্র সহ তিনজন আটক

» শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কঠোর হতে চায় না সরকার: উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম

» চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর

» জনগণ প্রত্যাশা মতো গণমাধ্যমের সহায়তা পাচ্ছি না: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কেবল শিক্ষিত নয়, সন্তানকে দায়িত্বশীল হিসেবে গড়তে হবে

আহমেদ আল আমীন: আবু মহসিন খানের আত্মহত্যার ঘটনা আমাদের সমাজের চােখে আঙ্গুল দিয়ে কঠিন বার্তা দিয়ে গেছে। তিনি আত্মহত্যার
অব্যবহিত পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কথা বলে গেছেন। জীবনে কতোটা দুঃখী হলে একজন মানুষ ধীর-স্থির থেকে, প্রস্তুতি নিয়ে, পরিকল্পিতভাবে নিজেকে শেষ করতে আত্মহত্যা করে ফেলেন, এই ঘটনায় আমরা তা বুঝে গেছি। বিশেষ করে ফ্যামিলি বন্ডিংস, স্বার্থপরতা, দায়িত্বহীনতা ও একাকীত্বের বিষয়টি সচেতন মহলকে ভাবিয়েছে। 

 

মানুষ একা থাকতে পারে না। একা জন্ম নিতে, এমনকি মরতেও পারে না। বিদায়বেলার আয়োজনেও মানুষকে তার প্রয়োজন। এর ব্যত্যয় ঘটলেই বিপত্তি।

 

তেমনই ঘটেছে মহসিন খানের ক্ষেত্রে। ঢাকার ধানমন্ডির একটি ফ্লাটে গত দুইটা বছর তিনি একা থাকতে বাধ্য হয়েছেন। বিশাল বাড়িতে একা। একাকীত্ব তার উপর ভর করেছে, মনে বাসা বেঁধেছে বিসন্নতা। একাকীত্ব তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে।
একাকীত্ব ও বিসন্নতা থেকে সৃষ্টি হয়েছে একরাশ অভিমান। মহসিন খানের আত্মহত্যার ঘটনায় আলোচনা ও বিতর্কের দুয়ার খোলা রেখে নিম্নোক্ত পর্যবেক্ষণ ও বার্তা রয়েছে।

 

* সম্পর্কের সঙ্গে সময় ও স্বার্থের সংযোগ রয়েছে। প্রতিটি সম্পর্কের মাঝে ব্যবধান ও মাত্রা রয়েছে। পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বেশি আপন ব্যক্তি নিজে। পরিচর্যা না থাকলে সম্পর্কের গাছ মরে যায়।
* বাবা-মা সন্তানের জন্য সহজেই স্বার্থ ত্যাগ করতে পারে, সন্তান তা পারে না।
* একাকীত্ব মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
* সন্তান শুধু শিক্ষিত করলেই হবে না, তাকে দায়িত্বশীল ও সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শেকড় মাটির গভীরে না গেলে, সে গাছ ভূমিকে রক্ষা করতে পারে না। ফুলদানির মতো উপড়ে পাড়ে। ক্যারিয়ার গঠনের চেয়েও পরিবার গঠন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
* একজন মানুষ সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে; কিন্তু নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারে না।
* শুধু অপরের জন্যই নয়, নিজের জন্যও মানুষের কিছু করতে হবে। নিজেকে সময় দিতে হবে, মূল্যায়ন করতে হবে। নিজের ভেতরে সবসময় বারুদ সঞ্চয় করে রাখতে হবে। যে কোনো ধরনের আঁধার, স্বার্থপরতা ও আঘাতের হিমশৈলকে জ্বালিয়ে গলিয়ে দিয়ে এই বারুদ অসময়ে তাকে রক্ষা করবে।
* যে কোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করতে হবে, প্রতিকূলতা জীবনেরই অংশ। হত্যা বা আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। আপনার আত্মহত্যায় কার লাভ? যাদের কারণে আত্মহত্যা করছেন, তাদেরই নয় কি? আপনার আত্মহত্যা রণে ভঙ্গ দিয়ে পরাজয়ের বার্তা দেয় কি না?

সূএ:বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com